বিমানে ফোন ফ্লাইট মোডে রাখতে হয় কেন? প্রযুক্তিগত ব্যাখ্যা ও বাস্তব কারণ
অনেকে ভাবেন, বিমানে ফোন ফ্লাইট মোডে রাখার নিয়মটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা বা “বাড়াবাড়ি” মাত্র। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক কারণ, যা সরাসরি নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত।
ফোনের তরঙ্গ কীভাবে সমস্যা তৈরি করে?
যখন আমরা ফোনে ফ্লাইট মোড চালু করি না, তখন সেটি আশেপাশের মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে সংযোগ খুঁজতে থাকে। এর জন্য ফোন থেকে নির্দিষ্ট রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ (Radio Frequency signals) নির্গত হয়। এ তরঙ্গ যদি বিমানের ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সিস্টেম বা নেভিগেশন যন্ত্রের সাথে একসাথে কাজ করতে থাকে, তাহলে সিগন্যালের মধ্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
ফলে বিমানের পাইলটের ককপিটে থাকা ডিভাইস যেমন–
নেভিগেশন সিস্টেম
অটোপাইলট
কমিউনিকেশন যন্ত্র
সবগুলোতে হঠাৎ গোলমাল বা ত্রুটি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে টেক–অফ (উড্ডয়ন) ও ল্যান্ডিং (অবতরণ) এর সময় এই হস্তক্ষেপ সবচেয়ে বিপজ্জনক হতে পারে।
ইতিহাসে কী হয়েছিল?
২০১৩ সালের আগে আন্তর্জাতিকভাবে বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সে যাত্রীদের ফোন পুরোপুরি বন্ধ রাখার নির্দেশনা ছিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যদি ফোনের ফ্লাইট মোড চালু রাখা হয়, তখন সেটি নেটওয়ার্কে সিগন্যাল পাঠায় না বা রিসিভও করে না। ফলে ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
তবে এখনো কিছু দেশে এবং কিছু এয়ারলাইন্সে এই নিয়ম খুবই কড়াভাবে মানা হয়, বিশেষত আকাশে নেভিগেশনের নির্ভরযোগ্যতার কারণে।
শুধু নিয়ম নয়, এটি দায়িত্বও
আজকের দিনে আমরা সবাই স্মার্টফোনে কাজ, গান শোনা, অফলাইন গেমস বা নোটস লিখে সময় কাটাই। ফ্লাইট মোডে থেকেও এই কাজগুলো করা যায়। তাই আকাশে উড়ার সময় ফোনে ফ্লাইট মোড চালু রাখা কেবল এক টুকরো নিয়ম মানা নয়; এটি আপনার ও বাকিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এক ধরনের সামাজিক দায়িত্বও।
কেন এই নিয়ম মানা জরুরি?
✅ বিমান চলাচলের সময় ফোনের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বন্ধ রাখা যায়
✅ বিমানের ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সিস্টেমকে হস্তক্ষেপমুক্ত রাখা সম্ভব
✅ দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যায়
✅ যাত্রা হয় আরও নিরাপদ
শেষ কথা
বিমানে ফোন ফ্লাইট মোডে রাখা নিয়ে কারও যদি প্রশ্ন থাকে, তাহলে জেনে রাখুন—এটি শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাই পরের বার ফ্লাইটে উঠলেই ফোন ফ্লাইট মোডে রাখতে ভুলবেন না। নিজের জন্য, সবার জন্য!